Tuesday, December 25, 2018

কয়েকটি চমৎকার উপায়ে উপভোগ করুন একাকিত্বকে

কোথাও ঘুরতে যেতে চাইলে, ভালো কোন রেস্টুরেন্টে খেতে যেতে চাইলে কিংবা শপিংয়ে যেতে চাইলে  আপনি হয়তো কখনো কখনো এমন পরিস্থিতিতে পড়তে পারেন যখন আপনার কাছের বন্ধু যে সবসময় আপনার সাথে যেতো সে ব্যাস্ত আছে। তাই যেতে হলে একা যেতে হবে। কি করবেন এমন পরিস্থিতিতে?  এক্ষেত্রে আমি আপনাকে বলতে পারি যে, কারো সাথে  ঘুরতে যাওয়া, খেতে যাওয়া কিংবা শপিংয়ে যাওয়া অবশ্যই অনেক আনন্দের কিন্ত একা একা এসব করাটাও কিন্ত কোন অংশে  কম আনন্দের না যদি আপনি এই ব্যাপারটাকে উপভোগ করতে পারেন। আপনি কি জানেন একা একা নিজের সাথে সময় কাটালে নিজের সম্পর্কে অনেক কিছু জানা যায়? জানা যায় নিজের দুর্বলতা আর সবলতা সম্পর্কে। আমাদের জীবনে অনেকেই আসে আবার চলে যায় আর দিনশেষে আমরা সবাই ই একা। তাহলে চলুন একা একা থেকেও কিভাবে জীবনটাকে  উপভোগ করা যায় সেটা নিয়ে আজ কথা বলা যাক।  

১. নিজেকে নিয়ে খুশি থাকুন

যখন কেউ আমাদের ছেড়ে চলে যায় বা আমরা হারিয়ে ফেলি তখন থেকেই আমাদের খুশি থাকার ইচ্ছেটা কমে যায়। চার দেয়ালের মাঝে গুটিয়ে রাখতে চাই নিজেকে, কারো সঙ্গই তখন আর ভালো লাগে না।আর  এভাবেই একাকিত্বের চাদর আমাদেরকে মুড়িয়ে ফেলে, একাকিত্বে ভোগি আমরা। তখনই নিজেকে বুঝান যে আপনার হাসিখুশি থাকার নিয়ন্ত্রক শুধু আপনিই, আপনার হাসিখুশি থাকাটা কারো উপর নির্ভর করে না। হাসিখুশি থাকার জন্য আপনিই আপনার নিজের জন্য যথেষ্ট। আর যে নিজেকে নিয়ে নিজের জীবন উপভোগ করতে জানে সুখ কখনোই তার কাছ থেকে দুরে চলে যায়না।  

২. নিজেকে আবিষ্কার করুন

আমার স্যার একবার বলেছিলো, "মানুষ জানার জন্য পৃথিবী ছেড়ে চাঁদে পর্যন্ত গিয়েছে কিন্তু নিজেকেই সে জানে না, কোন কোন পরিস্থিতিতে তার নিজেকেই নিজের কাছে অচেনা মনে হয়, অন্যের দোষ খুজে কিন্তু নিজেরও যে দোষ আছে তা জানে না।" আসলেইতো তাই, না?  তাই একাকিত্বের সময়টা নিজেকে আবিষ্কার করার বিশাল একটা সুযোগ। আপনার নিজের দোষ-ত্রুটি, দুর্বলতা সম্পর্কে জানুন, আপনার ভালোলাগা-মন্দলাগা সম্পর্কে জানুন। আর সেই সাথে নিজের দুর্বলতা কাটিয়ে উঠার পদক্ষেপ নিন। যেমন হতে পারে আপনি অপরিচিত কারো সাথে কথা বলতে ইতস্তত বোধ করেন সেটা কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করুন। 

৩. ধর্মীয় কাজে মনযোগ দিন 

আপনি যে ধর্মেরই হোন না কেন আপনার নিজের ধর্মিয় কাজে মনোযোগ দিলে সেটা আপনার মানষিক প্রশান্তি এনে দিনে। সৃষ্টিকর্তার কাছে নিজের জন্য, পরিবারের জন্য, দেশের মানুষের মঙ্গলের জন্য প্রার্থনা করুন। 

৪. ব্যায়াম করুন 
 
"স্বাস্থ্যই সকল সুখের মুল" এটা আমরা সবাই জানি। স্বাস্থ্য ভালো না থাকলে সবকিছুই কেমন যেন মলিন মনে হয়। কোন কাজ করার প্রতি আগ্রহ আসে না,  কাজে অগ্রগতি আসে না। আর তাই ভালো থাকার জন্য  স্বাস্থের যত্ন নেয়া জরুরী। তাই অন্তত নিয়ম করে ত্রিশ মিনিট করে সপ্তাহে তিন দিন ব্যায়াম করা উচিত। এর জন্য আপনি সাইকেল চালাতে পারেন,  সাতার কটতে পারে অথবা জিমে যেতে পারেন। 

৫. বই পড়ুন 

একাকীত্ব  কাটানোর জন্য বই পড়া হতে পারে একটি ভালো মাধ্যম।  বই পড়লে যে  ভালো সময়ই কাটে শুধু তা নয়, বই পড়ার মাধ্যমে আপনার চিন্তাভাবনা উন্নত হবে, আপনি হতে পারবেন একজন আলোকিত মানুষ। বই মানুষের কল্পনা শক্তিকে উন্নত করে, ভাবনার দোয়ার খুলে দেয়। একটা বই লিখতে একজন লেখকের কয়েক মাস সময়, শ্রম আর মেধা বিনিয়োগ করতে হয় আর মাত্র কয়েক ঘন্টায় সেই বইটা আপনি পড়ে নিচ্ছেন, তার কয়েক মাসের পরিশ্রমের ফসল কয়েক ঘন্টায় আপনি আপনার মাথায় ঢুকিয়ে নিচ্ছেন! এভাবে কখনো ভেবে দেখেছেন? 

৬. মুভি দেখা বা গান শুনা

একা থাকলে প্রিয় কোন মুভি দেখে বা গান শোনে নিজেকে প্রফুল্ল রাখতে পারেন। আপনি যে ধরনের মুভি বা গান শুনতে পছন্দ করে  তাই শুনুন বা দেখুন। তবে একটা ব্যাপার খেয়াল রাখলে ভালো হবে তা হলো স্যাড গান বা মুভি না দেখা।  তাহলে  দেখা যাবে মুভি দেখে আপনি ইমোশনাল হয়ে আরো মন খারাপ করে বসে আছেন। সবচেয়ে ভালো হয় কমেডি মুভি দেখলে। মুভির হাস্যকর সব ঘঠনা আপনার মন ভালো করে দেবে জাদুর মতো। 

৭. নিজেই নিজের ভালো বন্ধু হোন

একজন মানুষ নিজেই তার সবচেয়ে ভালো বন্ধু বা সবচেয়ে খারাপ শত্রু হয়ে যেতে পারে।  আর এটা নির্ভর করে তার নিজের উপর, সে নিজেকে কিভাবে পরিচালনা করবে তার উপর। সে নিজের মেধা, শ্রম আর সময়ের সঠিক ব্যবহার করে যেমন নিজেকে উন্নত করতে পারে অন্যদিকে নিজের এই মেধা,  শ্রম আর সময়ের অপব্যবহার করে নিজেকে ঠেলে দিতে পারে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে। তাই নিজেই নিজের ভালো বন্ধু হোন, নিজেকে ভালোবাসুন। 

৮. নিজের পরিবারকে সময় দিন 

অনেক সময়ই দেখা যায় আমাদের জীবন থেকে কেউ হারিয়ে গেলে আমরা তার অভাববোধ করি, একা হয়ে যাই, কিন্তু যারা সবসময় আমাদের পাশে থাকে তাদেরকে যদি সঠিক সময় দেই তাহলে একাকীত্ব বোধ কিছু হলেও লাঘব হয়। আর তাই নিজের পরিবারকে সময় দিন। 
হিউম্যান সাইকোলজি অনুযায়ী কেউ যখন তার মায়ের সাথে কথা বলে তখন তার শরীরে একধরনের হরমোন নিঃসরণ হয় যা তাকে মানষিকভাবে চাঙ্গা করে তুলতে সহায়তা করে। আর পরিবারে ছোট বাচ্চা থাকলেতো কোন কথাই নেই। ছোট বাচ্চার নির্মল, নিষ্পাপ  হাসি কার না ভালো লাগে? বাচ্চাদের সাথে খেলাধুলা করলে নিজের ভেতরের  বাচ্চামি বের হয়ে আসে, তখন মন খারাপ করে থাকে বা একাকীত্ব বোধ নিমিষেই উধাও হয়ে যাবে। 

৯. প্রকৃতির মাঝে সময় কাটান 

প্রকৃতি সবসময়ই রহস্যময়। প্রকৃতি তার সৌন্দর্য্য দিয়ে সবসময়ই মানুষকে মুগ্ধ করে রাখে। আর আমাদের দেশের প্রকৃতির সৌন্দর্য্য দেখে মুগ্ধ হয়ে কবি বলেছেন,

"এমন দেশটি কোথাও খুজে পাবে নাকো তুমি
সকল দেশের রাণী সে যে আমার জন্মভূমি "

তাই প্রকৃতির এই অপার সৌন্দর্য্য থেকে নিজেকে বঞ্চিত না করে প্রকৃতিকে উপভোগ করুন। প্রকৃতির মাঝে সময় কাটান। 

১০. নিজেকে ব্যাস্ত রাখুন

আপনি নিজেকে যখন কোন কাজের মধ্যে ব্যাস্ত রাখবেন তখন একাকীত্ব আপনাকে গ্রাস করার কোন সুযোগই পাবে না। আপনি নিজেকে ব্যাস্ত রাখার জন্য অনেক কিছু করতে পারেন। যেমন, আপনার যদি শখ থাকে বাগান করার আপনি তাতে সময় দিতে পারেন। আর বর্তমানে ইন্টারনেট  আমাদেরকে কোন কিছু শিখাটা অনেক সহজ করে দিয়েছে। যেমন আপনি ইউটিউবে দেখে মজার কোন খাবার রান্না করা শিখতে পারেন, আপনার যদি আকিঝুকি করতে ভালো লাগে তাহলে  ড্রয়িং শিখতে পারেন, অনলাইনে যেকোন নতুন একটি ভাষা শিখতে পারেন। তাছাড়া লেখালেখির অভ্যাস থাকলে ব্লগ লিখতে পারেন। 

১১. জমিয়ে রাখা কোন কাজ করে ফেলুন

অনেক সময় দেখা যায় কোন কাজ করবো করবো বলেও করা হচ্ছে না এমন হয়না? সেই জমে থাকা কাজটি তখন করে ফেলুন। 

১২. সমাজসেবা মূলক কার্যক্রমে যোগ দিন

দেশকে তুলনা করা হয় মায়ের সাথে। মা যেমন তার সন্তানকে স্নেহ-মমতা দিয়ে আগলে রাখে তেমনি দেশও মানুষকে তার আলো,বাতাস আর অন্যান্য সুবিধা দিয়ে বাচিয়ে রাখে। আর তাই দেশের মঙ্গলের  জন্য অবদান রাখতে পারাটা নিঃসন্দেহে একটি ভালো কাজ। আর এ জন্য আপনি কোন স্বেচ্ছাসেবী সংঘঠনে যোগ দিতে পারেন। এতে একদিকে যেমন ঘুচে যাবে আপনার একাকীত্ব বোধ তেমনি অন্যদিকে আপনি পাবেন মানষিক প্রশান্তি। 


বিভিন্ন কারনে আমরা একাকীত্ব অনুভব করতে পারি  কিন্তু তাই বলে ঘরের কোন নিজেকে গুটিয়ে রাখাটা কখনোই একটি ভালো সিদ্ধান্ত হতে পারে না। নিজেকে জানার সুযোগ বানান একাকিত্বকে। নিজেকে মেলে ধরুন আর উপভোগ করুন প্রতিটা মুহূর্তকে। 



No comments:

Post a Comment